গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করার আগে যা যা করণীয় ?

Rocky
0
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন আশাকরি সবাই ভাল এবং সুস্থ আছেন, যাই হোক আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে খুব পুরনো একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করবো কিন্তু বাংলা ব্লগারদের কাছে এই টপিক টি নতুনও বলা যাই আর কি। আপনি যদি একজন নিয়মিত ব্লগার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুনে থাকবেন যে গুগল তাদের ব্লগে ২৬ সেপ্টেম্বার ২০১৭ একটি পোস্ট এর মাধ্যমে জানাই যে গুগল অ্যাডসেন্স এখুন থেকে বাংলা ব্লগেও তাদের অ্যাড দেখানো শুরু করবে। যাই হোক সেই কথা শুনে সকল বাংলা ব্লগার (আমিও) খুশিতে নাচতে শুরু করে এবং সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করে বসে, কিন্তু সেই সময় তাদের আপডেট না থাকার কারনে বাংলা ব্লগারদের ফর্ম গ্রহন হচ্ছিলনা তবে এখুন সব নর্মাল সকল বাংলা ব্লগার অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করলে সেই আগের মত ভাষা সাপোর্ট করছে না এমন ম্যাসেজ দেখাবেনা।

যাই হোক আপনি যদি ব্লজ্ঞিং করতে চান তাও আবার বাংলা ব্লগিং আর আপনি যদি অ্যাডসেন্স সম্পর্কে একদম নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্ট সম্পূর্ণ পড়ুন আপনার অনেক উপর হবে অ্যাডসেন্স পেতে। আসলে অ্যাডসেন্স নিয়ে আমি কয়েক বছর কাজ করছি এবং এখুন পর্যন্ত বেশি না ৩ টা অ্যাডসেন্স Approved করিয়েছি আমার সেই অভিজ্ঞতা থেকেই নিচের বিষয় গুল তুলে ধরলাম।

অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন তাহলে এই বিষয় গুল পড়েনিন

গুগল অ্যাডসেন্স আবেদন করার আগে যেসকল বিষয় গুল লক্ষ রাখবেন 


আমি নিচে যে বিষয় গুল বলেছি তা সব নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কোন ইংরেজি ব্লগ থেকে কপি বা অন্য কোন ব্লগারের অভিজ্ঞতা থেকে না, আমি যেভাবে অ্যাডসেন্স পেয়েছি সেই গুল আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি।

অ্যাডসেন্স আবেদন করার পূর্ব চেক করে নিন আমি নিচে যা যা বলেছি তা আপনার ব্লগে আছে কিনা বা আমার বলার সঙ্গে মিচ্ছে কিনা। যদি মিলে তাহলে আপনি নির্দ্বিধাই আবেদন করে দিতে পারেন।


১। ব্লগের বয়স কত হওয়া উচিৎঃ  

এই বিষয় টা প্রথমে তুল ধরার একটি বিশেষ কারন হল আমি যত গুল অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করেছি তার সব কটি ব্লগের বয়স ছিল ৫-৬ মাস+। তাই আমি এটা বলবনা যে আপনার ব্লগ বয়স ৫-৬ মাস হতে হবে এটা আমার অভিজ্ঞতা বললাম, তবে ব্লগের বয়স যদি একটু বেশি হয় তাহলে ভাল হয়, তবে ব্লগের মান, পোস্টের মান, যদি ভাল হয় তাহলে এর কম সময় হলেও সমস্যা নেই। তবে যদি প্রথম বারেই অ্যাডসেন্স পেতে চান তাহলে ব্লগে সময় দিয়ে কিছু ভাল পোস্ট করে, কিছু ভাল ভিজিটর হবার পর আবেদন করুন এতে অ্যাডসেন্স ৯৯% পাবার চান্স থাকে।


২। ব্লগে পোস্ট এর সংখ্যা কত থাকলে অ্যাডসেন্স এর ক্ষেত্রে ভাল ঃ

অনেকেই মনে করে অ্যাডসেন্স এর জন্য ৩০, ৪০, ৫০, ৬০, ইত্যাদি পোস্ট থাকা চাই কিন্তু এটা আমি বিশ্বাস করিনা, আমি আগেই বলেছি এই পোস্টে সম্পূর্ণ আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আপনি যদি ভাল মানের ১০-১৫ পোস্ট করেন এবং আপনার ব্লগের বয়স যদি একটু পুরনো হয় তাহলে আপনি এই পরিমান পোস্ট দিয়ে অ্যাডসেন্স পেতে পারেন। উদাহারান স্বরূপ এই স্ক্রীন শর্ট টি দেখুন এখুন ব্লগে পোস্ট ২০ টি আছে কিন্তু আমি অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করেছিলাম ১৫ পোস্টে এবং Approved ও পেয়েছি । তবে আমি বলব আপনি ভাল মানের বেশ কিছু পোস্ট লিখুন তারপর আবেদন করুন এতে disapproved হবার চান্স অনেকটা কমে যাই।


৩। ব্লগে ভিজিটর কত থাকলে অ্যাডসেন্স এর ক্ষেত্রে ভাল ঃ

আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমি শেষ যে অ্যাডসেন্স Approved পাই সেই ব্লগে পোস্ট মাত্র ১৫ টি আর পেজ ভিউ প্রতিদিন ছিল ১০ এরও কম লাইফটাইম ২০০০ মত। তবে অনেকেই বলে ব্লগে মিনিমাম ১০০০ ভিজিটর থাকলে তবেই অ্যাডসেন্স পাবেন, কিন্তু আমার সঙ্গে ২ বার এমন হয়নি কম ভিজিটর দিয়েই আমি পেয়ে গেছি, তবে আপনি চেস্ট করুন ভাল কিছু ভিজিটর আনতে তারপর অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করুন। কারন ভাল ভিজিটর না থাকলে অ্যাডসেন্স পেয়েও তো লাভ নেই কারন ইনকাম হবেনা তাই মোটামোটি ভিজিটর বাড়ানোর চেস্টা করুন তারপর আবেদন করুন।


৪। ব্লগকে অবশ্যই Webmastertools এ সাবমিট করুন ঃ

আপনি যদি গুগল থেকে ভিজিটর পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই webmastertools এ ব্লগ সাবমিট করতে হবে, আর যদি না করেন তাহলে আপনার অ্যাডসেন্স পাবার আশাও অনেকটা কমে যাবে। তাই এই বিষয় টি ভাল ভাবে লক্ষ রাখেবেন আপনার ব্লগ webmastertools এ সাবমিট আছে কিনা।


৫। ব্লগ পোস্টে কত ওয়ার্ড এর পোস্ট থাকলে অ্যাডসেন্স পেতে সুবিদা ঃ

দেখুন এটা কোন কথাই না, ধরুন আপনি একটি পোস্ট লিখছেন যেটাতে ওয়ার্ড এর প্রয়োজন ৩০০ কিন্তু আপনি ফালতু ১০০০-২০০০ লিখতে যাবেন কেন! তবে হ্যা বেশি ওয়ার্ড এর পোস্ট থাকলে ভাল গুগল ভাল চোখে দেখে থাকে, তবে আমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই ওয়ার্ড এর সঙ্গে অ্যাডসেন্স এর সম্পর্ক খুজে পাচ্ছিনা। তবে আপনি চেষ্টা করবেন একটু ভাল মানের পোস্ট লিখতে যাতে ভিজিটর আপনার পোস্ট পড়ে আনান্দ পাই। তবে পোস্ট ওয়ার্ড এর সাথে অ্যাডসেন্স এর কোন সম্পর্কে আছে বলে আমার মনে হয়না, শুধু কিছু ভাল মানের পোস্ট লিখুন এখুন ভাল মানের পোস্ট বলতে কি বুঝাতে চাইছি বুঝেতেই পারছেন 😉।


৬। ব্লগ ডিজাইন কতটা গুরুত্ব পূর্ণ অ্যাডসেন্স এর ক্ষেত্রে ঃ

আমি অনেক ব্লগারকে দেখেছি অ্যাডসেন্স নিয়ে পোস্ট লিখেছে এবং সেখানে এই ডিজাইন এর বিষয় টিকে সিরিয়াস ভাবে তুলে ধরেছে, কিন্তু আমি এখুন পর্যন্ত এমন কিছু ব্লগে অ্যাডসেন্স দেখছি যাদের ব্লগ ডিজাইন সব থেকে নিম্ন মানের। তবে চেস্টা করুন একটু ডিজাইন টা সাদা মাটা রাখতে। ফ্রী থিম ব্যবহার করুন আর পেইড কোন সমস্যা নেই, আমার মনে হয় এই ডিজাইন এর বিষয় টা নিজের কাছে অহেতুক ব্লগ ভারি করবেন না ইউজার ফ্রেন্ডলি করবেন তাহলেই চিন্তা নেই 👍।


৭। ব্লগার না ওয়ার্ডপ্রেস অ্যাডসেন্স এর জন্য কোনটা ভাল হবে ঃ

আমি এখুন পর্যন্ত ৩ টি অ্যাডসেন্স Approved পেয়েছি যার মধ্যে ২ টি ব্লগার প্লাটফর্ম দিয়ে বানান ব্লগ আর একটি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে 😊। তবে ব্লগার যেহেতু গুগলের আর অ্যাডসেন্সও গুগলের তাই একটু হাল্কা সুবিধা পেতে পারেন তবে আমি সেরকম পার্থক্য লক্ষ করিনি, সম্পূর্ণ নিজের অভিজ্ঞতা বললাম। অ্যাডসেন্স পেতে প্লাটফর্ম নয় কন্টেন্ট টাই মূল বিষয় তাই সেই দিকটাই বেশি জোর দিন।


৮। কি ধরনের ডোমেইন ব্যবহার করা উচিৎ ঃ

আপনি আপনার ব্লগে যেকোনো টপ লেবেল ডোমেইন ব্যবহার করতে পারেন যেমন .com, .in. .net, .org ইত্যাদি তবে ভুলেও ফ্রী ডোমেইন দিয়ে আবেদন করেন না যদিও আমি পরীক্ষা করিনি তবে ফ্রী ডোমেইন দিয়ে না পাবার চান্স ৯৯%, ফ্রী ডোমেইন বলতে আমি .TK, .ML এই সব ফালতু ডোমেইন গুলর কথা বলতে চাইছি। যখুন ব্লগে অ্যাডসেন্স ব্যবহার করবেন অর্থ উপার্জন করবেন তখুন একটু নিজের পকেট থেকে অর্থ ব্যয় করুন না মশাই 😉। আর হ্যা সাবডোমেইন দিয়েও আমি চেস্টা করিনি, তবে শেষ কথা একটা টপ লেবেল ডোমেইন দিয়েই অ্যাডসেন্স আবেদন করুন।


৯। ব্লগে ক্র্যাক , প্যাচ, কপি পোস্ট, গান, মুভি ইত্যাদি নিয়ে পোস্ট করা যাবে কি ঃ

দেখুন অ্যাডসেন্স বলে না আপনি যদি ব্লগার প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন এবং ক্র্যাক, প্যাচ, কপি পোস্ট করেন তবুও ব্লগ ডিলিট হয়ে যাই আর এটা তো অ্যাডসেন্স এর বিষয়। আমি নিজেও এসো বন্ধু ব্লগে গান, মুভি, ক্র্যাক সফটওয়্যার অনেক শেয়ার করেছিলাম তবে সব পোস্ট ডিলিট করি তারপর আবেদন করি আপনিও সেটাই করুন তা নাহলে মুশকিল, এখুন আপনার মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, বাংলার কিছু বড় বড় ব্লগ গুল তো এই সব কটেন্ট দিয়েও অ্যাডসেন্স পেয়েছে তাহলে বলি গুগল যদি ধরতে পারে তাহলে বিনা নোটিশে ব্যান্ড হবে সেই সব অ্যাকাউন্ট। তাই এই বিষয় টি সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন।


১০। অ্যাডসেন্স আবেদনের আগে ব্লগে যে সকল পেজ থাকা আবশ্যক ঃ

এই বিষয়টি খুবি গুরুত্ব পূর্ণ, আপনি যখুন অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে যাবেন তখুন নিচের যে যে পেজ গুল আমি বলেছি সেগুল অবশ্যই আপনার মেনু সে অ্যাড করে নিবেন, তা না হলে সমস্যাই পড়বেন।


  1. প্রাইভেসি পলিসি পেজ
  2. ব্লগ বা লেখক সম্পর্কে একটি পেজ বানাবেন
  3. যোগাযোগ পেজ বানাবেন 
  4. Disclaimer পেজ বানাতে পারেন না হলেও সমস্যা নেই।
  5. সাইট ম্যাপ পেজ বানাবেন। 


উপরের পেজ গুল অবশ্যই নিজের ব্লগে মেনু কিংবা সাইড বারে অ্যাড করে নিবেন, তা নাহলে Approved হবে আপনার অ্যাকাউন্ট।


১১। Blogspot.com এই ডোমেইন দিয়ে কি অ্যাডসেন্স পাওয়া যাবে ঃ

এই বিষয় টি আমি সত্যি ক্লিয়ারনা তবে এখুন মনে হয় অ্যাডসেন্স দেইনা, তবে আগে দিত, আপনি সব সময় টপ লেবেল ডোমেইন দিয়ে চেস্টা করুন অবশ্যই অ্যাডসেন্স পেয়ে যাবেন।


শেষ কিছু কথা ঃ

বন্ধুরা উপরে আমি সব নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি যেগুল আমি অনুসরণ করেছি এবং অ্যাডসেন্স পেয়েছি, তাই আমি উপরে যা বলেছি আপনি অনুসরণ করুন সেই ভাবে নিজের ব্লগটা তৈরি করুন দেখুন আপনার ব্লগ অ্যাডসেন্স পেয়ে যাবে। বাকি গুগল অ্যাডসেন্সের যে Terms and Conditions আছে সেটা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি পোস্ট করবো। পোস্টটি বেশি বড় করলাম না, জানি যারা নতুন তাদের মধ্যে আরও অনেক একাধিক প্রশ্ন আছে যে গুলো আসতে আসতে পোস্ট করবো আপাতও এই টিপস গুলো ফলো করুন দেখুন কাজে হয়ে যাবে।

যাই হোক যদি মনে হয় এই পোস্ট থেকে আপনার উপকার হয়েছে এবং আপনি এই সব স্টেপ অনুসরণ করে আপনার অ্যাডসেন্স পেতে সফল হয়েছেন তাহলে অবশ্যই পোস্টটি কে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, অ্যাডসেন্স নিয়ে কোন রকম প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন আমি অবশ্যই উত্তর দিব, আজকের মত এই পর্যন্ত ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)